শিক্ষকরা মাউশির চিঠিতে ক্ষুব্ধ , বেড়েছে আন্দোলনের গতি
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে ক্লাসের পাঠদান বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন তারা। প্রতিদিনই বাড়ছে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। ৯ দিন ধরে শিক্ষকরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরেজমিনে দেখা গেছে, আজও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে প্রেসক্লাব সড়কে যান চলাচল অনেকটা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের স্লোগানে উত্তাল রয়েছে প্রেসক্লাব এলাকা।
এদিকে, শিক্ষকদের এই আন্দোলনের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার 'সতর্কবার্তা' দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানে কত জন শিক্ষক অনুপস্থিত আছেন তা তদারকি করতে মাউশির পক্ষ থেকে স্কুলের গভর্নিং বডি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি ও সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা।
এই নির্দেশনায় আরও ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনের ফলে তোপখানা সড়কের পল্টন-কদম ফোয়ারা এবং কদম ফোয়ারা-পল্টন মোড় অংশে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এই পথে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে ভিন্ন সড়কে চলাচল করছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) নেতৃবৃন্দ বলছেন, শিক্ষকেরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচিতে থাকবেন। অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষকেরা জানান, এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
বিটিএ'র সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা চলমান অবস্থায় গতকাল মাউশি যে চিঠি দিয়েছে, তা শিক্ষকদের আরও উত্তেজিত করেছে। যে শিক্ষকরা স্কুলে তালা দিয়ে ঢাকায় এসেছে, তাদের চিঠি দিয়ে ক্লাসে ফেরানো সম্ভব হবে না।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আমাদের এক দফা দাবি—মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলবে। আমরা দাবি আদায় করেই ক্লাসে ফিরব।
বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এসব শিক্ষকেরা। বিটিএ'র ব্যানারে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন তারা। জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশের অনেক শিক্ষক বিক্ষিপ্তভাবে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে ক্লাস বর্জন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। ফলে অনেক বেসরকারি স্কুলে তালা ঝুলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
0 Comments